ব্যানার দিয়ে সুরক্ষা পোশাক
- April 23,2020
- 621 views
কাজী মনিরুজ্জামান, শরীয়তপুর
শরীয়তপুর যে ৭ ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হয়েছেন তার ৩ জনই আমার কর্ম এলাকার। সেই শুরু থেকে তাদের পাশে আছি। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিতকরণ। নমুনা সংগ্রহ কাজ। প্রতিদিনকার খোঁজ খবর নিতে বাড়ি যাওয়া সবই করছি। দিনভর মানুষ ফোন দিয়ে খোঁজ দিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত জেলা থেকে এবাড়িতে ওবাড়িতে মানুষ এসেছে তাদের খোঁজ খবর সংগ্রহ করে এসব তথ্য অফিসে পাঠাচ্ছি। ওই সব মানুষকে হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ঠিকমতো তা মানছেন কিনা সেটাও দেখতে মাঠে থাকতে হচ্ছে। ঘুরছি আক্রান্ত এলাকায়, যেতে হচ্ছে বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে কিন্তু নিজের সুরক্ষায় নেই কোন উপকরণ! যৎসামান্য যে সরঞ্জাম পেয়েছিলাম তা শুরুতেই শেষ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই ইপিআই এর এই ব্যানারটি কেটে নিজেই তৈরি করেছি সুরক্ষা পোশাক। বাজার থেকে সংগ্রহ করা পলিব্যাগ আর সাবান ব্যবহার করছি। কাজ তো আর রেখে দেয়া যাবে না আর সেবাও বন্ধ করা আমার দায়িত্ব হতে পারে না। তাই এই পোশাক পরে নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন করছি, দিচ্ছি সেবা পাশে থাকবো শেষ পর্যন্ত এটাই আমার অঙ্গীকার। ক্ষোভ নয় অনেকটা অসহায়ত্ব নিয়েই এভাবে কথাগুলো বলে গেলেন শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সহকারি মোক্তার হোসেন হাওলাদার।
রুদ্রকর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী সিদ্দিকুর রহমান জানালেন, প্রথম কোন রোগীর সংস্পর্শে আমাদেরকেই আসতে হয়। কিন্তু সম্পূর্ণ অনিরাপদ ভাবেই আমরা ওই সকল মানুষের সংস্পর্শে যেতে বাধ্য হচ্ছি। প্রচুর সংখ্যক লোকের সংস্পর্শে আসতে হয় কিন্তু ন্যূনতম হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস, গগজ অথবা মাস্ক এগুলো আমরা অফিস থেকেও পাইনি। এখন বাজারেও সেভাবে সহজলভ্য না। তাই ঝুঁকি নিয়েই এই স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।
আংগারিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক তপন পোদ্দার বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগে কাজ করি মানুষকে ঘরে থাকতে নির্দেশনা দিলেও কাজের তাগিদেই মাঠে যেতে হচ্ছে। এক রকম ঢাল-তলোয়ার বিহীন যুদ্ধে নামা। প্রতি মুহূর্তেই আতঙ্ক। যেখানে ২০ মিনিট পর পর হাত পরিষ্কার রাখার কথা সেখানে নিজের সুরক্ষার জন্য নিজেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে পারছি না। নেই পর্যাপ্ত হ্যান্ড গ্লাভস, চশমা শুধুমাত্র সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছি। মানুষের সংস্পর্শে যেতে এই উপকরণগুলো খুবই জরুরী।
এমন চিত্র শরীয়তপুর জেলা জুড়ে মাঠে থাকা স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারি স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের।
শরীয়তপুরের সিভিল সার্জন আব্দুল্লাহ আল মুরাদ বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের কথা চিন্তা করে প্রতি উপজেলায় হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া নমুনা সংগ্রহের সময় চাহিদা মতো তাদের দেয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা অন্য উপকরণগুলো আমাদের কাছে নেই এগুলো পাওয়া গেলে সেগুলোও প্রয়োজন মতো স্বাস্থ্য সহকারীদের মধ্যে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হবে।