মৃত নারীর দাফনের পর জানা গেলো করোনা; নারায়ণগঞ্জের ১০০ পরিবার ‘লকডাউনে’

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এক নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রসুলবাগ এলাকার একাংশ লকডাউন করেছেন উপজেলা প্রশাসন। লকডাউনের আওতায় পড়েছে এলাকাটির ১০০ পরিবার।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জেলা সিভিল সার্জন নেতৃত্বে উপজেলা প্রশাসন বন্দর উপজেলার ‘রসুলবাগের একাংশ লকডাউন করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শুক্লা সরকার যমুনা নিউজকে বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই নারীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রসুলবাগ এলাকায় লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এই এলাকার ১০০ পরিবার লকডাউনে থাকবে।

জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজের নেতৃত্বে লকডাউনকালে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) শুক্লা সরকার, জেলা করোনা ফোকাল পারর্সন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল কাদের, র‌্যাব-১১’র সহকারী পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি কর্মকর্তাদের সূত্রে  জানা গেছে, গত ২৯ মার্চ রোববার বন্দর উপজেলার রসুলবাগ এলাকার ৫০ বছর বয়সী এক নারীকে শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বজনরা। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ওই নারীকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু তারা ওই দিন ওই নারীকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বাড়িতে ফেরত নিয়ে আসে। পরদিন (৩০ মার্চ) ওই নারী আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

কুর্মিটোলা হাসপাতাল ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠায়।

এদিকে, স্বজনরা লাশ বন্দরের বাড়িতে নিয়ে আসে। এর আগে ওই নারী স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিল। স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে মনে করে দুই ছেলে এবং মেয়ের জামাইসহ স্বজনরা ওই নারীর লাশ বন্দর উপজেলার স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে আইইডিসিআর এ পরীক্ষায় ওই নারীর করোনাভাইরাস পজেটিভ আসলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ওই এলাকা লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এদিকে, এলাকার লোকজনের ভাষ্য, ওই নারীর মৃত্যু করোনাভাইরাসে হয়েছে তারা শুরুতেই ধারণা করেছিলেন। এই কারণে তার লাশ স্বজনরা দাফন করেছেন।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ জানান, দুপুরে  ইইডিসিআর-এ পরীক্ষায় ওই নারীর নমুনায় করোনাভাইরাস পজেটিভ হওয়ায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে ওই এলাকা লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শুক্লা সরকার জানান, নিহত নারীর বাড়িসহ আশেপাশের একশ পরিবারকে লক ডাইনের আওতায় আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের রসুলবাগ এলাকায় প্রবেশের তিনিট পথ রয়েছে। দুটি পথ সরু হওয়ায় টিন দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে। একটি সড়ক বড় হওয়ার ওই রাস্তার প্রবেশ পথে পাচঁজন পুলিশ নিয়মিত টহল দেয়ার জন্য মোতায়ন করা হয়েছে। যে দুটি সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেই দুটি সড়কও দু’জন করে পুলিশ নিয়মিত ডিউটি করবে। এছাড়া স্থানীয় পাঁচজন সেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। পুলিশের পাশপাশি তারাও দায়িত্ব পালন করবেন। যাতে ওই একশ পরিবারের কোন সদস্য বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্য কোথাও যেতে না পারে।

তিনি বলেন, লকডাউনে থাকা পরিবারের সদস্যদের কাছে ইউএনও, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ওসিসহ সবার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে অন্যকারো মধ্যে করোনা রোগের উপসর্গ দেখা দিলে জানাতে পারে। এছাড়া তাদের চাল ডালসহ কোন সামগ্রী প্রয়োজন হলে কল দিয়ে জানালে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হবে।

সূএ:Jamuna tv