৩৮ কিমি আঞ্চলিক সড়কে ১৩৫ বাঁক, দুঃসহ ভোগান্তি এখন চরমে
- September 5,2025
- 87 views

মলয়া ডেস্ক
ভুলতা থেকে আড়াইহাজার–বাঞ্ছারামপুর হয়ে নবীনগর–শিবপুর–রাধিকা পর্যন্ত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। অথচ সেই স্বল্প দূরত্বেই রয়েছে ১৩৫টি বাঁক। কোথাও খানাখন্দ, কোথাও ভাঙা অংশ, কোথাও আবার এমন সরু জায়গা যে পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচলই প্রায় অসম্ভব। সড়কটির প্রস্থ মাত্র ১২ ফুট, যা দেশের অন্য কোনো আঞ্চলিক মহাসড়কে নেই।
অথচ নিয়ম অনুযায়ী এ ধরনের সড়কের প্রস্থ হওয়ার কথা ৩৪ ফুট। ফলে প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এই পথে। এতে সাধারণ যাত্রীরা ভোগ করছেন চরম দুর্ভোগ। মাত্র এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।
সড়কটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের কোনাঘাট থেকে শুরু হয়ে বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়ুইকান্দি ফেরিঘাটে গিয়ে শেষ হয়েছে। এরপর ফেরি পার হয়ে যাত্রীরা পৌঁছান নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার হয়ে রাজধানী ঢাকায়। নবীনগর উপজেলার শ্রীরামপুর, রসুল্লাবাদ, রতনপুর, শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আইয়ুবপুর, ছয়ফুল্লাকান্দি, দড়িকান্দি ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার অন্তত ১০ থেকে ১৫ গ্রামের মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করছে এই সড়ক দিয়ে। কিন্তু সড়কের ভগ্নদশা, সংকীর্ণতা ও ঘন ঘন বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, মাত্র এক ঘণ্টার পথ যেতে তাদের সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। এতে শুধু সময়ই নষ্ট হচ্ছে না, দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কাও প্রতিদিন বাড়ছে।
Google News গুগল নিউজে প্রতিদিনের বাংলাদেশ”র খবর পড়তে ফলো করুন
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আঞ্চলিক মহাসড়কগুলো জাতীয় মহাসড়কের পরেই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশে ১২ ফুট প্রশস্ত আর কোনো আঞ্চলিক মহাসড়ক নেই। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এ সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে স্থানীয়রা। অবশেষে ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন হয় ১ হাজার ১৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প। এতে বলা হয়, সড়কটি প্রশস্ত ও টেকসই করে নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে, পাশাপাশি বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হবে। এতে ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি হয়ে যাবে ৩২ কিলোমিটার।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন বলেন, ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে ১০টি এলএ কেস সৃজন করা হয়েছে এবং ৪ ধারার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান ও গ্রহণ শেষে টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন সম্পন্ন হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী দুই মাসের মধ্যেই ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে। ভূমি অধিগ্রহণ দ্রুত শেষ হলে প্রকল্প বাস্তবায়নও গতি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুধু সড়ক উন্নয়নই নয়, বাঞ্ছারামপুরের কড়ুইকান্দি থেকে আড়াইহাজারের বিষনন্দী পর্যন্ত মেঘনায় প্রস্তাবিত সেতুটি নির্মিত হলে এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটবে। প্রায় ৩ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর বিষয়ে সেতু কর্তৃপক্ষও কাজ করছে। সেতুটি নির্মিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট ও আশপাশের জেলার মধ্যে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ আরও সহজ হবে। আর তখন এ আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আঞ্চলিক মহাসড়কটির শেষাংশ অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাধিকা থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক ইতিমধ্যেই প্রশস্ত করা হয়েছে। গত বছরের জুনে ওই অংশকে ৩৪ ফুটে রূপান্তর করা হয়। তবে মূল অংশ এখনো আগের মতো সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং মেঘনা সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। তা না হলে হাজারো মানুষের যাত্রা প্রতিদিনের মতো দুর্ভোগের পথেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
